পাচারের অর্থ ফেরানোর মামলা পরিচালনায় ১০০ মিলিয়নের ফান্ড সংগ্রহের পরিকল্পনা
প্রকাশিত : ১৮:০৫, ১৪ জুন ২০২৫ | আপডেট: ১৮:০৮, ১৪ জুন ২০২৫

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি লন্ডনে অনুষ্ঠিত এক উচ্চ পর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠকে জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের মধ্যে ৩০টি বড় সম্পদ পুনরুদ্ধার মামলার জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলার লিটিগেশন ফান্ড সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে। লন্ডনের খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক আইন সংস্থা ডিএলএ পাইপার এই গোলটেবিল আলোচনাটির আয়োজন করে। যেখানে বিশ্বখ্যাত লিটিগেশন ফান্ডিং প্রতিষ্ঠান ও তদন্ত কম্পানির প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ১০ থেকে ১৩ জুন লন্ডনে চার দিনব্যাপী সরকারি সফর সম্পন্ন করেছেন।
এ সময় তিনি বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন, যা দেশের সম্পদ পুনরুদ্ধার কার্যক্রম, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ও রেমিট্যান্স প্রবাহ সহজীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। গভর্নর মূলত প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে লন্ডনে যান, তবে তিনি স্বতন্ত্রভাবে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেন, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত অগ্রাধিকার বাস্তবায়নে সহায়ক হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, গোলটেবিলে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ছিল ওমনি ব্রিজওয়ে, বেঞ্চওয়াক ক্যাপিটাল, আলভারেজ অ্যান্ড মার্সাল এবং ইউনিটাস গ্লোবাল। অংশগ্রহণকারীরা দ্রুত বাংলাদেশ ব্যাংক ও দেশীয় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে চুক্তি (এনডিএ) স্বাক্ষর করে ঋণ খেলাপি ও পাচার হওয়া সম্পদের তথ্য বিনিময় শুরু করার ওপর জোর দেন, যাতে আন্তর্জাতিক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ ত্বরান্বিত করা যায়।
গভর্নর ড. মনসুর আলোচনায় বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক চায় এই মামলাগুলোর মাধ্যমে বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ ফেরত আনতে। তিনি প্রস্তাব করেন, যুক্তরাজ্য ও সিঙ্গাপুরের মতো প্রধান অর্থপাচার গন্তব্য দেশে মামলা পরিচালনার জন্য একটি স্পেশাল পারপার ভেহিকল (এসপিভি) গঠন করা যেতে পারে, যা সম্পদ পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবে এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রভাব থেকে রক্ষা করবে।
গভর্নরের এই ঘোষণাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্পদ পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ফের হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর মাধ্যমে শুধু দেশের আর্থিক খাত নয়, আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ নতুন একটি মাত্রা ছুঁতে যাচ্ছে।
এ সফর ও রাউন্ডটেবিল আলোচনার পর আন্তর্জাতিক লিটিগেশন ফান্ডিং ও তদন্ত সংস্থাগুলোর সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
১১ জুন গভর্নর ড. মনসুর এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) পরিদর্শন করেন এবং আইএসিসিসি প্রধান ড্যানিয়েল মারফিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে গভর্নর বাংলাদেশ সরকারের সম্পদ পুনরুদ্ধার টাস্কফোর্সের সঙ্গে আইএসিসিসি-এর চলমান সহযোগিতার প্রশংসা করেন এবং ১১টি অগ্রাধিকার সম্পদ পুনরুদ্ধার মামলায় গঠিত যৌথ তদন্ত দলের (জেআইটি) কারিগরি সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি উল্লেখ করেন, যুক্তরাজ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ১৭০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদ এবং সম্প্রতি বেক্সিমকো গ্রুপের শায়ান রহমান ও শাহরিয়ার রহমানের ৯০ মিলিয়ন ডলার সম্পদের জব্দকরণ বাংলাদেশের সম্পদ পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টার একটি বড় অর্জন। গভর্নর আশা প্রকাশ করেন, এই পদক্ষেপ অন্যান্য অর্থপাচার গন্তব্য দেশগুলোকেও অনুপ্রাণিত করবে।
এনসিএ সফরের পর গভর্নর লন্ডনে আন্তর্জাতিক আইন সংস্থা ডিএলএ পাইপার আয়োজিত একটি গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন। আলোচনায় ওমনি ব্রিজওয়ে, বেঞ্চওয়াক ক্যাপিটাল, আলভারেজ অ্যান্ড মার্সাল এবং ইউনিটাস গ্লোবালসহ বহু বৈশ্বিক তদন্ত ও লিটিগেশন ফান্ডিং প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ২০২৫ সালের মধ্যে ৩০টি বড় মামলা চালাতে ১০০ মিলিয়ন ডলারের লিটিগেশন ফান্ডিং সংগ্রহের রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা হয়। অংশগ্রহণকারীরা দ্রুত বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে গোপনীয়তা চুক্তি (এনডিএ) সই করে তথ্য বিনিময় ও সম্পদ শনাক্তকরণের কাজ শুরুর আহ্বান জানান।
গভর্নর এই প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, যুক্তরাজ্য ও সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলোতে মামলার জন্য একটি স্পেশাল পারপাস ভেহিকল (এসপিভি) গঠন করা হলে তা সম্পদ পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবে এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের ঝুঁকিও কমাবে।
এসএস//
আরও পড়ুন